নিউজ ডেস্ক : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা ও মামুনুল হক কাণ্ডসহ একাধিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া এক যুবলীগ ক্যাডারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বারের সাধারন সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এইচ এম আনোয়ার প্রধান। বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও দলীয় নেতা হওয়া সত্বেও একজন যুবলীগ ক্যাডারের পক্ষে ওকালতি করায় আনোয়ার প্রধানকে নিয়ে সমালোচনা চলছে সর্বত্র।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে যুবলীগ নেতা হিসেবে নিজের প্রচার—প্রচারণা চালিয়ে গিয়েছিলেন ফারুক হোসেন রিপন ওরফে সেমাই রিপন। বিগত সময়ে তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিগুলোতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। এমনকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে গণসংযোগে নেমে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়িয়েছিলেন যুবলীগ ক্যাডার ফারুক হোসেন রিপন। ওই সময়ের একাধিক ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কখনো নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, কখনো শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান আবার কখনো ১৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কবীর প্রধানের ঘনিষ্ট লোক পরিচয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে রিপন শহীদনগর এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে চলতেন।
সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে আলোচিত মামুনুল হক কাণ্ডে ছাত্রলীগ যুবলীগের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ ক্যাডার রিপনের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। এমনকি মামলার ১৮নং এজাহারভুক্ত আসামীও তিনি। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো সহ রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।
এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র—জনতার আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালানো এবং গুলি বর্ষণের মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে এই যুবলীগ ক্যাডারের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং সোনারগাঁও থানায় ছাত্র—জনতা হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। এরপর একেরপর এক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অথচ, সেই যুবলীগ ক্যাডার ও আওয়ামী দোসরের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি নেতা এইচএম আনোয়ার প্রধান। ছাত্র—জনতা হত্যা মামলার আসামী যুবলীগ ক্যাডার রিপনের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় আনোয়ার প্রধানকে নিয়ে আদালত পাড়াতে সমালোচনা চলছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, যারা চিহ্নিত বা আওয়ামী লীগের ক্যাডার কিংবা দোসর হিসেবে পরিচিত, তাদের পক্ষে বিএনপিপন্থী কিংবা গুরুত্বপূর্ন পদে থাকা কোনো আইনজীবী অবস্থান নিবে কিংবা আইনী সহায়তা দিবে— এটা মোটেও সমীচীন নয়। এটা দৃষ্টিকটু।’
এদিকে চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত রিপনের পক্ষে আইনজীবী হওয়ার কারণ জানতে বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি নেতা এইচএম আনোয়ার প্রধানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে একটি সূত্রে জানা গেছে, জেল হাজতে বন্দি থেকেও রিপন তার লোকদের দ্বারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থিত মনির টাউয়ারে নতুন চেম্বারও নেয়া হয়েছে রিপনের নামে। সেখানে রিপনের সহযোগিরা অবস্থান নিয়ে নানা কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।